কেন ভালবাসা শিখাইছিলা ভালো যদি নাই বাসো

ছোট বেলা থেকেই চেষ্টা ছিল পাবলিক স্কুলে পড়ার। পাবলিক স্কুলের ছাত্ররা যখন সামনে দিয়ে হেটে যেত তখন হা করে তাকিয়ে থাকতাম। বন্ধুদের সাথে সুর করে পাবলিক – পাদ লিক বলে চেচাতাম ঠিকই তবে মনে মনে ঠিকই ইচ্ছা পুষে রাখতাম একদিন আমিও পাবলিক স্কুলে পড়ব। কালো শু আর হেব্বি ভাব নিয়ে স্কুলে যাব। আল্লাহ মনে হয় আমার মনের কথা শুনতেন আর হাসতেন আর বলতেন যাবি সময় জলে ঠিকই যাবি। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ করে দিলেন। ক্লাস এইটে আমি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হই ।

যেন নতুন একটা পৃথিবীতে আসি। সবার মাঝে আমাকে যেন গাইয়ার মত মনে হত।
আমার মতে আমিও হাল ছারার পাত্র না। সময়ের সাথে সাথে আমিও পাল্টে গেলাম। ঐ লাইফে যা হয় আরকি! সবাই প্রেম নামক গর্তে পরে রিতিমত হা পা ভেঙ্গে ফেলছে এমন অবস্থা। আমিও তার থেকে বাদ যাই কেন? সদ্য কিশোর মনে আমার ও প্রেম নামক জিনিসটা উকি ঝুকি মারে। আর সাথে তুই করবি প্রেম! বলে ফ্রেন্ডদের খোচা মারা বানী তো ফ্রি ছিল।

আবেগ ভরা সেই কিশোর মনে কখন যে প্রেম নামক জিনিসটা আসে তা আমি নিজেও বুঝতে পারি নি। বলতে গেলে জীবনের প্রথম ক্রাস খাই আমি ক্লাস এইটে। মেয়েটার নাম কাকলী। প্রথম খেয়াল করি আমাদের গণিত ক্লাসে। তখন মনেহয় ফ্রেব্রুয়ারি শেষ দিকে। আব্দুল্লাহ স্যার আমাদের গণিত নিতেন। বর্গের অঙ্ক শিখানোর সময় কাকলিকে বর্গের সুত্র জিজ্ঞেস করেছিলেন স্যার। হ্যা এখন ও ভুলিনি এসব।প্রত্যেকটি দিনের কথা মনে আছে।

স্বভাবতইসে সঠিক উত্তর দিয়েছিল। সেদিনই প্রথমখেয়াল করি মেয়েটিকে। তখনও নাম জানতাম না। তবে মনে মনে তার নাম ঠিকই দিয়েছিলাম। সেদিন থেকেই তার ব্যাপারে খোজ খবর নেওয়া শুরু করি। কোথায় থাকে, ওর বাবা কি করে, কয় ভাই বোন, কোন অ্যাফেয়ার আছে কিনা সব জানা শেষ। ঐ সময় ও জানলে হয়ত অবাক হত এই ভেবে যে তারই ক্লাস এ নামে একটি ছেলে আছে যে কিনা তার মিস্ট্রিরি হিস্টরি সব জানে অথচ সে হয়ত ছেলেটির নামও জানেনা।

হয়ত কখনও ভালকরে খেয়াল করে দেখেও নি। অবশ্য এই জিনিসটা আমি খুব ইনজয় করতাম। দিনে দিনে শুরু করলাম তাকে ইমপ্রেস করার। তবে আমার মধ্যে কেন জানিনা একটা ইগো কাজ করত। এমন ইগো যা আমার মতে কোন ছেলের মধ্যে নেই। আমার মনের ইচ্ছা ছিল কাকলি আমাকে নিজে প্রপোজ করবে। এমন ভাবে ইমপ্রেস করতাম যাতে কেউ কখনও সন্দেহ করতে পারে। আর তাই হয়েছে। পুরো এক বছরে কেউ আমাকে সন্দেহ করতে পারেনি। এমনকি আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু সাব্বির ও না।

এভাবেই দিন কাটছিল। আমি যেন প্রতিদিন ক্লাসে আসতাম কাকলিকে দেখার জন্য। ওর মায়াবি সুগভির কাল চোখ একবার দেখলে মনে হত যেন আটলান্টিক মহাসাগর। আমাকে যেন টানছে। কাছে গেলেই ডুবে যাব ওর চোখে। চলে যাব অতল গভীরে। আর ওর চুলগুলো যেন পৃথিবির অষ্টম আশ্চর্য। সবচেয়ে ভাল লাগত যখন বাতাসে ওর চুলগুলো উরত। যেন স্বর্গের পরী। মেঘের উপর খেলা করার সময় টুপ করে নিচে পরে গিয়েছে। আর এসে ঠিক আমার সামনে পড়েছে। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিদিন ই দেখতাম ওকে ।মাঝে মাঝে ভাবতাম আচ্ছা ও কি কিছু বুঝতে পারেনা? মেয়েরা নাকি সহজেই বুঝতে পারে।

কিন্তু কিসের কি? ওর মধ্যে তো কোন কিছুই দেখিনা দিনগুলো যেন উসাইন বোল্টের স্পিডে পার হয়ে যাচ্ছিল। মধ্যে দিয়ে অনেক দিন পার হয়ে গেল। এর মধ্যে সাব্বির এর একটা সিকরেট জানতে পারলাম। আমাদের সাব্বির দ্যা গ্রেড নাকি ক্রাস খেয়েছে। তাও আবার যে সে না। একেবারে হায়ার লেভেল কর্নেলের মেয়ে। দিনে দিনে সে প্রেমে গদগদ হচ্ছে। আমি যদিও মনে মনে একটা ভয় পাচ্ছিলাম। আর যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধা রাত ভোর সব হয়। আমার উপর দায়িত্ব এল ঐ মেয়েকে প্রপোজ করার ।

এগিয়ে গেলাম বন্ধুর জন্য,কর্নেলের মেয়ে হোক আর রাষ্টপতির মেয়ে। ব্যাপার না। পিছু পিছু চললাম। উদ্দেশ্য কোন এক নির্জন জায়গা। ঐ মেয়ে কোন রিয়েকশন করলে যাতে কেউ না দেখে এই আরকি তো হাটছি হাটছি বলতে যাব এমন টাইমে দেখি আমার কাকলি অপজিট ওয়ে দিয়ে হেটে আসছে। কি করি করি। তারপর এমন একটা ভাব ধরলাম যে আমি কিচ্ছু জানিনা। আস্তে করে হেটে চলে গেলাম। পরে বন্ধুকে কিজানি একটা বুঝিয়ে শান্ত করেছিলাম।

দেখতে দেখতে প্রায় দের বছর চলে গেল। একটা করে দিন যায় আর আমার ভালবাসা সমানুপাতিক হারে বারে ততদিনে ঠিক করে নিয়েছি আর পারা যায় না। যা থাকে কপালে প্রপোজ আমিই করব। আর কিভাবে জানি ক্লাসের ছেলেরা সবাই জেনে গিয়েছে আমার ডুবে ডুবে মাম খাওয়ার ব্যাপারটা। একরকম কানাঘুষা চলত আর বন্ধুরা খালি খোচা দিত। এভাবে বেশিদিন চালানো যায় না। প্রপোজ করবই করব। একদিন বিকেলে পার্কে বসে ছিলাম আমি আর সাব্বির। আমাদের পরিচিত এক বড় ভাই আসল।

কিছুক্ষণ কথা বলার পর উনি বললেন।আমি তো একেবারে শেষ রে কেন কি হয়েছে ভাই ? আরে কাকলিকে চিনিস না তোরা তোদের ক্লাসেই তো পড়ে। আমি আর সাব্বির দুজন দুজনের দিকে তাকালাম। কেন জানিনা আমার মনের ভিতর অজানা এক ভয় হতে থাকল। ভাইয়া আবার কাকলিকে ভালবাসে নাকি!

–জি ভাই চিনিতো কেন কিছু হয়েছে ভাইয়া মাথা নিচু করে আছে।
–কিহল ভাইয়া মন খারাপ নাকি কি জয়েছে বলবেন তো।
–ভাইরে জীবনে কাউকে মন দিয়ে ভালবাসিস না।

–কেন ভাই,বলবেন তো কি হয়েছে?ওকে খুব ভালবাসতাম রে। মন থেকে ভালবাসতাম। আমি এখন ও স্টুডেন্ট। আমি কি লাখ লাখ টাকার চাকরি করি?প্রথম প্রথম ওকে প্রায়ই গিফট দিতাম। রেস্টুরেন্ট এ খেতে নিয়ে যেতাম। কিন্তু যখন আমার পকেটে টান পরে তখন থেকেই ওর বিরক্তি শুরু হয়। ও আমার সাথে ব্রেকআপ করছে। ভাইয়া মন খারাপ করবেন না। ও এরকম মেয়ে না।

— ভাইরে তুই তাহলে কিছুই জানস না। ও এরকমই মেয়ে। বয়ফ্রেন্ড বানায়। ফুর্তি করে। টাকা পয়সা নেয়। পকেটে টান পরলেই ফুড়ুৎ..আমি সব আগে থেকেই জানতাম। তবুও কেন জানিনা ওকে ভালবেসে ফেলেছিলাম।কিন্তু আমার ভুল আজ ভেঙ্গে গেছে রে ভাই। মন খারাপ করবেন না ভাই। আপনি মন খারাপ করেন কিজন্য,আপনি মন খারাপ করেন কিজন্য,আপনি কি কোন দোষ করেছেন।

— আমিই তো দোষ করছি রে ভাই। আমার যদি টাকা পয়সার অভাব না থাকত তবে আজ আমি কাকলিকে হারাতাম না। শেষ মেষ ভাইকে অনেক বুঝাইয়া বাসায় পাঠালাম। মাথাটা অবশ্য আমার ও নিচু হয়ে আছে। আমার ও দোষ আছে। আমিও তো ওর যোগ্য নই। তারপর ও ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। নীল শাড়ি পরিয়ে ওকে নিয়ে নৌকায় ঘুরব। কাশফুল তুলব। একসাথে জোসনা দেখব।

তারা গুনব। সব স্বপ্ন শেষ।
সাব্বিরের কথায় যেন
বাস্তবে ফিরে আসলাম।
–কিরে –কি ভাবিস??
— হুুু কিছুনা।
— মন খারাপ করিস না রে দোস্ত।
— হা হা আরে না পাগল নাকি???
–কাকলির কথা ভুলে যা। ওর চেয়ে অনেক
ভাল মেয়ে পাবি তুই জীবনে।
— আরে বাদ দে তো ওসব কথা।
–ওকে
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি কত বড় ভুল’ই না করেছি। না জীবনটাকে দেখছি নতুনকরে শুরু করতে হবে। এখন দেরি হয়নি।সেই থেকে এই আজকের আমি। ঐ দিনের পর ভালবাসা নামক মরীচিকার পিছনে কোনদিন ছুটিনি। ভালবাসা নামক
কৌতুকে অংশগ্রহন করে নিজেকে ভাড় প্রমান করতে চাইনি। সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছি আর সময়ের সাথে এগিয়ে গিয়েছি। আয়নার সামনে নিজেকে দেখলে মাঝে মাঝে অবাক হই।

কোথায় সেদিনের আর কোথায় আজকের কিউরিয়াস মাইন্ড। প্রথম দিকে জোর করে ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম। প্রথম প্রথম পারতাম না। আর এখন অনেকক্ষণ ভাবার পরও কাকলির চেহারাটা মনে করতে পারি না। আজ সারাদিন চেষ্টা করলাম। নাহহ হল না। শুধু নামটাই মনে আছে। আর কিছু না। দিন শেষে একটা কথাই শুধু বলব তোমাকে..সত্যিই বলছি তোমাকে আর ভালবাসি না..গল্পের পুরোটাই কাল্পনিক। কারো নামের সাথে মিলে গেলে কিউরিয়াস মাইন্ড দায়ি নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *