খেজুরএটি যেমন সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যকর ফল। খেজুর খেলে তা শরীরে এনার্জির ঘাটতি মেটাতে কাজ করে। যে কারণে রোজায় এই ফল বেশি খাওয়া হয়। তবে শুধু রমজানেই নয়, খেজুর খাওয়া উচিত সারা বছর। কারণ এটি শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয়। খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। খেজুরের মধ্যে আছে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে, তিনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে কোষ্টকাঠিন্য দূর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এবং খেজুর শর্করা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে থাকে।
কারণ খেজুরের মধ্যে গ্লাইসেমিক সূচনা খুবই কম রয়েছে। যার রক্তের মধ্যে শর্করা মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে ও খেজুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে। কারণ খেজুরের মধ্যে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা হাড়ের সমস্যা দূর করতে এবং হাড় মজবুত আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এবং খেজুর মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে অর্থাৎ মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। খেজুরের মধ্যে আছে ভিটামিন বি এবং কোলাজের যেটা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। খেজুর ত্বকের জন্য উপকারী ও খেজুর ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল খেজুর। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে ভিটামিন,সি ও ভিটামিন,ডি। যা ত্বকে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের নরম রাখতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুরের খাওয়ার উপকারিতা:-
১. ভিটামিনের উৎস:-
উপকারী ফল খেজুরে থাকে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার। এই উপাদানগুলো স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভীষণ কার্যকরী। নিয়মিত খেজুর খেলে তা যেকোনো ভিটামিনের ঘাটতির কাজ করে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার সাথে খেজুর যোগ করে নিতে পারেন। এতে পরিবর্তনগুলো আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।
২. দ্রুত শক্তি জোগায়:-
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা খেলাধুলা করেন তাদের জন্য উপকারী একটি ফল খেজুর। কারণ এটি দ্রুত এনার্জি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যারা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল তারা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে শারীরিক বিভিন্ন দুর্বলতা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে। তবে বেশি শক্তি পাওয়ার আশায় একসঙ্গে অনেকগুলো খেজুর খাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতএব আমরা জানি যে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। খেজুরে প্রচুর ফাইবার থাকে। তাই পেটের যেকোনো সমস্যায় এটি ভীষণ উপকারী। সেইসঙ্গে এটি বদ হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে। তাই পেটে যেকোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। এতে দ্রুতই উপকার হতে পারে।
৪. কোষ ভালো রাখে:-
আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তবে কোষের বিভিন্ন ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। কোষ বাঁচাতে নিয়মিত খাবারের খেজুর রাখতে পারেন। এতে সার্বিকভাবে সুস্থ থাকা সহজ।
৫.হাড় ভালো রাখে:-
খেজুরে থাকে ক্যালশিয়াম,ফসফোরাস ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো জরুরি উপাদান। এই উপাদানগুলো হাড় ভালো রাখে ও মজবুত করে। তাই হাড়ের সুস্থতা নিশ্চিত করতে চাইলে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
৬. খেজুর পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:-
খেজুর পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়মমতো পরিমাণে খেজুর খাওয়ার ফলে পুরুষের শুক্রাণু গুণমান বৃদ্ধি করে। খেজুর এস্ট্রাডিওল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড দ্বারা লোড করা হয়, যা শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৭. খেজুর চুলের জন্য খুবই উপকারী:-
খেজুর চুলের জন্য খুবই উপকারী। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন এবং চুল মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে।
৮. রক্ত শূন্যতার জন্য উপকারী খেজুর:-
রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান খেজুর। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। যা শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই যে সব ব্যক্তি রক্তাল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী ফল।
৯. হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে খেজুর:-
আমাদের শরীরে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে খেজুর। কারণ খেজুর আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য হয়। তাই খেজুর হার্টের জন্য উপকারী উপাদান।
১০. খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:-
খেজুর আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য কারী উপাদান হিসেবে কার্যকরী।
১১. খেজুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে:-
খেজুর আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
১২. ফোলা কমাতে সাহায্য করে খেজুর:-
অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে ফোলা ভাব দেখা দেয়। যার জন্য অনেক রকমের ওষুধ খাওয়া হয় এবং আলাদা আলাদা মেসেজ করা হয়। কিন্তু খেজুরের সাহায্যে ব্যথা এবং ফোলা উভয় থেকেই মুক্তির পাওয়া যেতে পারে।
খেজুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের শরীরে ব্যথা এবং ফোলার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে এটি খাওয়ার আগে ফুলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নিতে হবে।
খেজুর ফলের পুষ্টি উপাদান,এই উদ্ভিদ মানবদেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ।খেজুর ফল ফাইবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা খেজুর ফলের মধ্যে ১৮.০ গ্রাম জলীয় অংশ, মোট খনিজ পদার্থ ১.৭ গ্রাম ৩.৯ গ্রাম আঁশ, ৩২৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২.২ গ্রাম আমিষ ০.৬ গ্রাম চর্বি ৭৭.৫ গ্রাম শর্করা ৬৩ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ এবং অল্প পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ সস্তা,পুষ্টিকর এবং উপাদেয়। খেজুর রসে অ্যাসপারটিক এসিড নাইট্রিক এসিড এবং থায়ামিন বিদ্যমান।
আরবের প্রধান ফল খেজুর এ বৃক্ষ মহিমা নিয়ে সূরা আন্’আ-ম্, আয়াত-৯৯-১০০ নাজিল হয়েছে। খেজুরের মোচা হতে ফলের থোকা থোকা বানাইয়াছেন, যাহা বোঝার ভরে নুইয়া পড়ে। এই গাছগুলো যখন ফলধারণ করে তখন উহাদের ফল বাহির হওয়া ও উহার পাকিয়া যাওয়ার আবস্থাটা একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাইয়া দেখিও। এই সব জিনিসের সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ নিহীত রহিয়াছে তাহাদের জন্য যাহারা ঈমান আনে। তাই আরবি খেজুরের প্রতি আমাদের দুর্বলতা প্রবল।
তবে আমাদের দেশের খেজুর এবং আরবের খেজুর ফলের মধ্যে বেশ তারতম্য রয়েছে। আমাদের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর আর সৌদি আরবের খেজুর ফল উৎপাদননির্ভর।