ডেঙ্গু মশা বলতে এডিস প্রজাতির মশাকে বোঝানো হয়, বিশেষ করে Aedes aegypti এবং Aedes albopictus। এডিস মশা সাধারণত ভোর এবং সন্ধ্যায় কামড়ায় এবং ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ও পীতজ্বরের মতো ভাইরাস ছড়ায়। ডেঙ্গু রোগটি ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে, যা এই মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে, যেমন ফুলের টব, প্লাস্টিকের বোতল বা পরিত্যক্ত টায়ারের মধ্যে থাকা পানি। ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা, ঘরের চারপাশে মশার ওষুধ ব্যবহার করা এবং রাতে মশারি ব্যবহার করা জরুরি।
ডেঙ্গু মশার বৈশিষ্ট্য
ডেঙ্গু মশা এডিস এজিপ্টাই (Aedes aegypti) এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস (Aedes albopictus) নামের দুটি প্রধান প্রজাতির মশা দিয়ে সংক্রমিত হয়। এগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
১. দিনের বেলা কামড়ায়: এডিস মশা সাধারণত সূর্যোদয়ের কিছু পর এবং সূর্যাস্তের কিছু আগে বেশি সক্রিয় থাকে। বিশেষ করে দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে।
২. দেখতে কেমন: এডিস মশা আকারে ছোট এবং কালো রঙের হয়। এদের গায়ে সাদা দাগ থাকে যা তাদের সহজে চেনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য।
৩. প্রজনন স্থান: এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। এরা ফুলের টব, বালতি, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিকে প্রজননের জন্য ব্যবহার করে।
ডেঙ্গু ভাইরাস ও রোগ:
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রধান ধরন রয়েছে: DENV-1, DENV-2, DENV-3, এবং DENV-4। একবার কেউ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তার শরীরে জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, কিন্তু একাধিক ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ:
১. উচ্চ জ্বর: আকস্মিকভাবে উচ্চ জ্বর দেখা দিতে পারে।
২. শরীরে ব্যথা: বিশেষ করে পেশী ও হাড়ের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হতে পারে, একে কখনও কখনও “ব্রেকবোন ফিভার” বলা হয়।
৩. মাথাব্যথা: অনেক ক্ষেত্রে তীব্র মাথাব্যথা দেখা দেয়।
৪. বমি বমি ভাব: পেটের সমস্যা যেমন বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৫. ত্বকে ফুসকুড়ি: ত্বকে লাল ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে, যা ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ।
ডেঙ্গু রোগ কখনও কখনও ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) এবং ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমের (DSS) রূপ নিতে পারে, যা জীবনঘাতী হতে পারে। এর ফলে রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
জমে থাকা পানি অপসারণ: এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানি, যেমন ফুলের টব, পানির ট্যাঙ্ক, প্লাস্টিকের বোতল, বা ভাঙা টায়ার থেকে পানি ফেলে দিতে হবে।
মশা প্রতিরোধক স্প্রে বা জাল: মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশা প্রতিরোধক স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। মশারি, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময়, ব্যবহার করা জরুরি।
পরিচ্ছন্নতা রক্ষা: বাড়ির ভেতর ও বাইরে সবসময় পরিষ্কার রাখা, এবং পানির ট্যাংক বা পাত্র ঢেকে রাখা।
পোশাক: এমন পোশাক পরিধান করা উচিত যা শরীরকে ঢেকে রাখে, যেমন লম্বা হাতার জামা এবং লম্বা প্যান্ট।
ডেঙ্গুর টিকা: কিছু দেশে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে টিকা অনুমোদিত হয়েছে, যেমন ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া (Dengvaxia)। তবে এই টিকা সব জায়গায় সহজলভ্য নয় এবং এটি শুধুমাত্র বিশেষ অবস্থায় ব্যবহার করা হয়।
নিয়মিত শারীরিক দুর্বলতা দূর করার উপায় বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন…
ডেঙ্গুর জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ নির্ভর চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা যায়
জ্বর নিয়ন্ত্রণ: প্যারাসিটামল বা জ্বর কমানোর ওষুধ দিয়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
তরল গ্রহণ: প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গুতে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ: রোগের অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হতে পারে। বিশেষ করে যদি রোগী হেমোরেজিক ফিভার বা শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়। এই সব তথ্যগুলো মাথায় রেখে ডেঙ্গু থেকে নিজেকে এবং সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব।