চুন দিলে কলা পাকে কেন

চুন দিলে কলা পাকে কেন?চুনের ব্যবহার বহুবিধ। দ্রুত কলা পাকাতে চুন ব্যবহার করা হয়। দেখুন চুন দিলে কলা পাকে কেন এবং কলা পাকানোর উপায় ও পদ্ধতি।

আমাদের দেশে পান খাওয়ার প্রচলন বেশি। শহরের তুলনায় গ্ৰামের মানুষ বেশি পান খায়। আত্মীয়দের আপ্যায়নেও পান খেতে দেয়া হয়। এজন্য বাঙালিদের রসিক বলা হয়। পানের একটি অপরিহার্য উপাদান চুন। চুন ছাড়া পান খাওয়া যেন পরিপূর্ণ হয় না।

শুধু পান খেতেই নয় ফসল উৎপাদন, পুকুরে মাছ চাষ, সিমেন্ট তৈরি, বাড়িঘর চুনাকরণ, জীবাণু দূরীকরণ, ব্লিচিং পাউডার তৈরি, রঙকরণ ইত্যাদি কাজে চুন ব্যবহার করা হয়। এখন কলা পাকাতেও চুন ব্যবহৃত হয়। আপনি কি জানেন চুন দিলে কলা পাকে কেন? চলুন জেনে নেয়া যাক, চুন দিলে কলা পাকে কেন?

চুন দিলে কলা পাকে কেন:

চুন দিলে কলা পাকে কেন? জানার আগে কলা সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি তথ্য জেনে নিন। ‘কলা’ একটি অতি পরিচিত ফল। সহজলভ্য ও সুলভ হওয়ায় যে কেউ কলা কিনতে পারে। কলার গুণাগুণের শেষ নেই। পুষ্টিসমৃদ্ধ কলায় রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। কলা থেকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, কলা মানুষের শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়। কলার অর্থনৈতিক ভূমিকাও ব্যাপক । আমাদের দেশের কৃষকরা স্বল্প খরচে কলা চাষ করে লাভবান হতে পারে। অনেকে বেশি লাভবান হওয়ার আশায় চুন‌ দিয়ে কলা পাকান। প্রশ্ন হচ্ছে, চুন দিলে কলা পাকে কেন?

<টেবিল> চুনের নাম – সংকেত

কলিচুন – Ca(OH)2

পাথুরে চুন – CaCO3

পোড়া চুন – CaO

ডলোমাইট – CaMg(CO3)2

জিপসাম – CaSO4.2H2O

চুন (CaO) এক প্রকার খনিজ পদার্থ। বাজারে বিভিন্ন ধরনের চুন পাওয়া যায়। যেমন: কলিচুন (Slaked lime), পাথুরে চুন (Lime stone), পোড়া চুন (burned lime/quick lime), ডলোমাইট (Dolomite), জিপসাম (gypsum) ইত্যাদি। পোড়া চুনকে ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড বলা হয়। পোড়া চুনের রাসায়নিক সংকেত হলো CaO। অন্যদিকে, পাথুরে চুনকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বলা হয়। পাথুরে চুনের সংকেত হলো CaCO3।

আমরা পানের সাথে পোড়া চুন ও পাথুরে চুন খাই। কলা পাকাতেও পাথুরে চুন (Lime stone) ও পোড়া চুন (burned lime/quick lime) ব্যবহার করা হয়।সাধারণত কলা পাকানোর জন্য প্রতিটি কলায় ফোঁটা ফোঁটা চুন মেখে দেয়া হয়। চুনে রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড যা কৃত্রিমভাবে কলা পাকাতে সাহায্য করে। কলায় চুন মাখলে এটি বাতাসের সংস্পর্শে এলে অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন করে।

অ্যাসিটিলিন গ্যাস ‘কার্বাইড গ্যাস’ নামে পরিচিত। অ্যাসিটিলিন গ্যাস ইথিলিনের মতো দ্রুত কাঁচা ফল পাকায়। সাধারণত কলায় চুন দিয়ে উপরে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যাতে বাতাসের সংস্পর্শে এসে অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় কাঁচা কলা দ্রুত পেকে যায়। তবে বাংলাদেশে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো নিষিদ্ধ। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকি রয়েছে।

সতর্কতা: চুন দিয়ে কলা পাকানো স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

কলা পাকানোর উপায় ও পদ্ধতি,

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায়ে কলা পাকানো যায়। দ্রুত কলা পাকানোর জন্য অনেকে ঔষধ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। তবে কৃত্রিম উপায়ে পাকানো কলা খেয়ে পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, জন্ডিস, সাধারণ দুর্বলতা, লিভার ও কিডনি সমস্যা, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ঘরোয়া উপায়ে কলা পাকানো উচিত। দেখুন ঘরোয়া উপায়ে কলা পাকানোর উপায় ও পদ্ধতি:

উচ্চ তাপমাত্রা: স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে উচ্চ তাপমাত্রায় কলা দ্রুত পাকে। রোদ পড়ে এমন কক্ষে কলা রেখে দিতে পারেন। গরম ও উষ্ণ কক্ষে রাখলে সহজেই কলা পেকে যাবে।

মাইক্রোওয়েভ: মাইক্রোওয়েভ দিয়ে খুব সহজে কলা পাকানো যায়। মাইক্রোওয়েভে ২৫-৩০ সেকেন্ডের জন্য কলা রেখে দিন, এরপর বের করুন। এতে অল্প সময়ে কলা নরম হয়ে খাওয়ার উপযুক্ত হবে।

কাগজের ব্যাগ: কলা পাকানোর আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ‘কাগজের ব্যাগ’। এজন্য উন্নতমানের কাগজের ব্যাগে কলা ভরে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিতে ১২-২৪ ঘন্টার মধ্যে কলা পাকতে শুরু করবে।

ধানের তুষ ও গমের ভূষি: ‘ধানের তুষ’ বা ‘গমের ভূষি’ দিয়ে কলা পাকানো‌ একটি প্রাচীন পদ্ধতি। এজন্য ধানের তুষ বা গমের ভূষির ভেতরে কলা রেখে দিতে হবে। গ্ৰামে এই পদ্ধতিতে কলা পাকানো হয়। এই পদ্ধতিতে আম, কাঁঠালসহ অন্যান্য ফলও পাকানো যায়। এছাড়া চালের ভেতর রেখেও কলা পাকানো যায়। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন কলা পঁচে না যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *