“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি,চির-কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর,,

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম দ্বারা রচিত এই পঙক্তিগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় নারীরা হলেন সমাজের অন্যতম পরাশক্তি। সুস্থ-নিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। নারীশক্তির বিকাশ ও সমাজে নারীদের সুস্পষ্ট অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮ই মার্চ বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে থাকে “আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

১৯১৪ সাল থেকে এ দিবসটি বিভিন্ন দেশজুড়ে পালিত হলেও জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো নারী ও পুরুষের সমঅধিকার আদায়। বিশ্বজুড়েই আজও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত, যদিও নারীদের ছাড়া পরিকল্পিত সমাজ কল্পনাই করা যায় না। নারী দিবসের মাধ্যমে জেন্ডার সমতা, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা, নারী-পুরুষের একতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ ইত্যাদির উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই পালন করা হয়। বাংলাদেশে এবছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো-

“ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন

জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন।

নারীরা পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি এবং নারীদের কৃতিত্ব ও অবদান পৃথিবীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো অংশেই কম নয়। নারীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অর্জনকে স্মরণ করার জন্য এবং তাঁদের উৎসাহিত করে তোলার জন্য প্রতিবছর ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। নারী দিবসের লক্ষ্য হল লিঙ্গ সমতার বার্তা প্রদান করা, লিঙ্গ বৈষম্য রোধ করা ইত্যাদি। বর্তমানে নারীরা গৃহিনী হতে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তবে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তেমনভাবে এখনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ যাবে ১৫ মার্চ থেকে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন…

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন নারী কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং মানসিক সমস্যার প্রাদুর্ভাব পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি৷ নারীদের মধ্যে সাধারণত যেসব মানসিক সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হল- হতাশা এবং উদ্বেগ। এই দু’টো সমস্যা ছাড়াও নারীদের একান্ত নিজস্ব যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গর্ভকালীন বিষন্নতা, মাসিকের আগে ও পরে ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া, মেনোপজের আগে ও পরে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়া। নারীদের মানসিক সমস্যাগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাজ এড়িয়ে যেতে চায় কিন্তু এই সমস্যাগুলো নারীদের বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ্ (National Institute of Mental Health -NIMH) এর মতে, বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে বোঝা যায় যে একজন নারীর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১. প্রতিনিয়ত দুঃখ বা হতাশার অনুভূতি

২. মাদকাসক্তি

৩. অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা

৪. খাওয়া ও ঘুমের অভ্যাসের আকস্মিক পরিবর্তন

৫. ক্ষুধা কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া

৬. প্রতিনিয়ত ক্লান্ত অনুভব করা

৭. হ্যালুসিনেশন হওয়া

৮. ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন

৯. শারীরিক কোনো সমস্যা ছাড়াই মাথাব্যাথা ও হজমের সমস্যা

১০. নিজেকে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে গুটিয়ে নেওয়া

১১. আত্মহত্যা করার প্রবনতা।

মানসিক স্বাস্থ্য প্রত্যেকের জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও নারীদের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় কিছুটা কঠিন কারণ আমাদের সমাজে নারীদের বরাবরই উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখা হয়। তবে বর্তমানে আমাদের সমাজের শিক্ষিতজনদের মাঝে অনেকেই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলোকে সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন এবং এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করছেন। নারীদের এই মানসিক সমস্যাগুলো কিছুটা হলেও কমানোর জন্য বা রোধ করবার জন্য দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন, যেমন- স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহন করা, নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তোলা, মাদক ও এলকোহল আসক্তি থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত শরীরের যত্ন নেওয়া, পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো, যেকোনো মানসিক সমস্যা হলে চিকিৎসক বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া।

খেজুরের উপকারিতা কতটুকু বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন…

একজন নারীর মানসিক সুস্থতার ওপর তাঁর পরিবারের অবস্থাও নির্ভর করে কারণ পরিবারের কান্ডারী হলেন নারী। নারীদের যেকোনো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে নিজেকে সবার আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং কুসংস্কার থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে সবাই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো

সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবেন।

By MD MOSTOFA

Permanent address:- vill: Ballavbishu, Post: Bhutchhara, Upazilla: kaunia, District: Rangpur

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *